ভবনাটি প্রথমে এসেছিল ড্যাফোডিল ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটির (ডিআইইউ) চেয়ারম্যান সবুর খানের মাথায়। ২০১১ সালে তিনি আইটি বিভাগের প্রধান নাদের বিন আলীকে ডেকে বললেন, ‘চাইলে এই বিশ্ববিদ্যালয়ের সব অনুষ্ঠানই তো আমরা ইন্টারনেট লাইভ হিসেবে প্রচার করতে পারি। এই অনুষ্ঠানগুলোর সবই যেহেতু ছাত্র-ছাত্রী ও শিক্ষকদের কর্মকাণ্ড ও তাঁদের উদ্দীপনা জোগাতে হয়, এগুলো আবেদন কম নয়। অন্যরাও সেগুলো দেখে অনেক কিছু শিখতে পারে।’ এর পর থেকে ওয়েব টিভির কাজ শুরু হলো। যুক্তরাষ্ট্র থেকে ব্রডকাস্ট সফটওয়্যার কিনে আনা হলো। আরজে (রেডিও জকি) হিসেবে ইংরেজির সৈয়দ রায়হানুল ইসলাম ও সাংবাদিকতা বিভাগের জয়ন্ত কর্মকার কাজ শুরু করলেন। তাঁদের মাধ্যমে ‘ক্যাম্পাস ক্যাম্পাস’ ও ‘ইউনিভার্সিটি আড্ডা’ নামে দুটি ধারাবাহিক অনুষ্ঠান তৈরি করা হলো। ‘ক্যাম্পাস ক্যাস্পাসে’ ছাত্র-ছাত্রীরা বিশ্ববিদ্যালয়টিতে ভর্তির পর তাঁদের অনুভূতির কথা জানালেন। তাতে ভালো-মন্দ সবই উঠে এলো। এ অনুষ্ঠানের মাধ্যমে বিশ্ববিদ্যালয়ের কর্মকাণ্ডকে আরো উন্নত করতে কাজ শুরু করল কর্তৃপক্ষ।

২০১৩ সালের ১৫ জানুয়ারি এ দুটি অনুষ্ঠানের সম্প্রচার শুরু হলো। বিশ্ববিদ্যালয়ের ফেসবুক পেইজে শেয়ার করার পর অনেক লাইক ও শেয়ার হলো। তখন সব কাজই ঢাকার সোবহানবাগের ড্যাফোডিল টাওয়ারের চারতলার মিডিয়া ল্যাব থেকে হতো। ২০১৪ সালের ২৫ ফেব্রুয়ারি অনলাইন রেডিওর কাজ শুরু করল এই টিভি। সে জন্যও উন্নত প্রযুক্তি কিনে আনা হলো বিদেশ থেকে। সে বছরের ২৩ মার্চ ‘অ্যালামনাই নাইট’ প্রচার করল। এই অনুষ্ঠানে লাইক পড়ল সাড়ে চার লাখ, শেয়ার হলো প্রায় দুই লাখ। এটি আশুলিয়ার স্থায়ী ক্যাম্পাসের অনুষ্ঠান ছিল। এর পরই সাংবাদিকতার ছাত্র-ছাত্রীদের এখানে কাজ শুরু হলো। তাঁরাই নানা অনুষ্ঠান ধারণ ও প্রচার করা শুরু করলেন। প্রতিদিন বেলা ১২টা থেকে দুপুর ২টা পর্যন্ত ক্যাম্পাস টিভির সম্প্রচার হতে লাগল। প্রতিটি অনুষ্ঠান আধঘণ্টার। তিন ঘণ্টা পর পর অনুষ্ঠানগুলো আবার প্রচার করা হয়। ২০১৬ সাল থেকে টিভি পূর্ণাঙ্গ সম্প্রচার করতে লাগল। তাদের অন্যতম অনুষ্ঠান হলো উদ্যোক্তাদের নিয়ে। নানা ক্ষেত্রের সফল উদ্যোক্তাদের দাওয়াত দিয়ে আনা হয়। তাঁরা তাঁদের জীবনের গল্প বলে ছাত্র-ছাত্রীদের উদ্দীপ্ত করেন। তাঁদের মধ্যে এসেছেন—পিএইচপি গ্রুপের চেয়ারম্যান সুফী মিজানুর রহমান, এপেক্স গ্রুপের চেয়ারম্যান সৈয়দ মাঞ্জুর এলাহী, বিআরবি কেবলসের চেয়ারম্যান মুজিবর রহমান, এসিআই গ্রুপের চেয়ারম্যান আনিস-উদ-দৌলা, হামীম গ্রুপের চেয়ারম্যান এ কে আজাদ, অ্যাডকমের চেয়ারম্যান গীতিআরা সাফিয়া চৌধুরী, বিখ্যাত নারী উদ্যোক্তা রোকিয়া আফজাল রহমান, রহিম আফরোজের কর্ণধার নিয়াজ রাহিম, ট্রান্সকম গ্রুপের চেয়ারম্যান লতিফুর রহমান, বিবি প্রডাকশনের কর্ণধার ও বিখ্যাত ফ্যাশন ডিজাইনার বিবি রাসেল। ‘আর্ট অব লিভিং’ নামে আরেকটি অনুষ্ঠান আছে এই টিভিতে। এটির পাঁচটি অনুষ্ঠান প্রচার করা হয়েছে, সাতটি তৈরি আছে। এখানে কাজ করছেন ডিআইইউর স্টুডেন্টস অ্যাফেয়ার্স পরিচালক সৈয়দ মিজানুর রহমান রাজু ও বিবিএ প্রগ্রামের লেকচারার এজাজ-উর-রহমান। ৩০ মিনিটের অনুষ্ঠান। এই অনুষ্ঠানের মাধ্যমে মা-বাবাকে ছাত্র-ছাত্রীরা কিভাবে সাহায্য করতে পারে, সেসব নৈতিকতাও শেখানো হয়। যেমন মার পা ধুয়ে দেওয়া, বাবার সঙ্গে যেকোনো উপলক্ষে কোলাকুলি করা ইত্যাদি। ‘ইমপ্লয়বিলিটি ৩৬০’ নামের অনুষ্ঠানের উদ্দেশ্য আত্মনির্ভরশীল ও চাকরির জন্য উপযোগী শিক্ষার্থী তৈরি করা। বেসিক টিউটরিয়ালের মতো জরুরি বিষয়গুলো এখানে দেখানো হয়। ১০ মিনিটের এই অনুষ্ঠানের শুরু হয় ২০১৭ সালের ১২ আগস্ট। এতে উদ্যোক্তা বিভাগের শিক্ষক শিবলী শাহরিয়ার ও এ বিভাগের কো-অর্ডিনেটর অফিসার সোহাগ মিয়া কাজ করেন। বৈশ্বিক মানুষ হওয়ার জন্য যে অনুষ্ঠান আছে সেটির নাম ‘গ্লোবালাইজেশন’। এতে সিএসই (কম্পিউটার সায়েন্স অ্যান্ড ইঞ্জিনিয়ারিং) বিভাগের ফয়সাল বিন আবুল কাশেম ও মারুফ চৌধুরী কাজ করেন। মোট ৯টি অনুষ্ঠান প্রচার করা হচ্ছে, প্রতিটির দৈর্ঘ্য ৩০ মিনিট। বিদেশ থেকে পড়তে আসা শিক্ষার্থীরাও এখানে তাঁদের অনুভূতি শেয়ার করছেন। বিশ্ববিদ্যালয়ের নানা ক্ষেত্রে সফল ছাত্র-ছাত্রীদের গল্প নিয়ে আছে ‘ক্যাম্পাস হিরো’। বিভিন্ন বিষয়ে বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালেয়ের ছাত্র-ছাত্রীদের মধ্যে যোগাযোগ ও যুক্তির চর্চা বাড়াতে প্রচারিত হয় ‘ক্যাম্পাস পার্লামেন্ট’। এই টিভির মাধ্যমে ছাত্র-ছাত্রীরা লেখাপড়ার পর চাকরির জন্য যোগ্য হয়ে উঠছে আবার গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের ছাত্র-ছাত্রী কাজ শিখছে বলে জানালেন অন্যতম পরিচালক ইমরান হোসাইন। টিভিতে নানা দায়িত্বে কাজ করছেন—প্রডাকশন ডিরেক্টর এস এম আব্দুর রাজ্জাক, প্রডাকশন ম্যানেজার নাফিজা মৌ, ক্যামেরায় ইসমাইল হোসাইন, আইটিতে নাদির বিন আলী, কাজী আরিফ ও শিপন।

এই টিভিতে কাজ করে এখন এনিমেশন ফার্মে কাজ করছেন হাসান যোবায়ের। তাঁর মতো আরো অনেকের কাজের সুযোগ করে দিয়েছে ‘ক্যাম্পাস টিভি’। এখনো অন্যদের মতো টিভিটি প্রতিদিন দেখেন সিএসই বিভাগের ১১তম সেমিস্টারের ছাত্র সুমনুল ইসলাম। ক্যাম্পাসে বন্ধুদের নিয়ে টিভির অনুষ্ঠান সম্পর্কে তাঁরা গল্প করেন।  ওয়েব সাইট —www.campustv.ac