আম্মু সেদিন একাই ড্যাফোডিলের আশুলিয়া ক্যাম্পাস ঘুরে আসে।বাসায় এসে আমার হাতে ইংরেজি ডিপার্টমেন্টের ভর্তির একটা লিফলেট ধরিয়ে দিয়ে বললেন,ইংরেজি ডিপার্টমেন্টেই ভর্তি হও।মনে মনে অনেক খুশি হলেও আম্মুকে বলেছিলাম, ইংরেজি নিয়ে পড়বো না।আম্মুকে তাই রাজি করানোর পালা চলতে থাকে। ভর্তি হওয়ার আগের দিন রাত পর্যন্ত আমি প্রতি বেলা একবার করে লিফলেট টা দেখতাম।ইশ! কবে ভর্তি হতে যাবো।

অবশেষে আসলো সেই অপেক্ষিত দিন, ১১ ই ডিসেম্বর ২০১৯। ভর্তি হলাম, তবে নিউট্রিশান এ্যান্ড ফুড ইঞ্জিনিয়ারিং ডিপার্টমেন্টে।গুটি গুটি পায়ে ক্যাম্পাসে আসা, একাউন্টসে টাকা জমা দিয়ে আসার সময় সেই এডমিশন অফিসের সামনে দেখি তিনজন মেয়ে দাঁড়িয়ে ,একটু এগোতেই দেখি তাদের মধ্যে একজন হাত বাড়িয়ে দাঁড়িয়ে আছেন।শিউর হওয়ার জন্য সামনে গেলাম, যেটা ভাবলাম সেটাই হলো।আম্রিন আপু! সাথে সালসাবিল আপু আর উর্মি আপুও আছেন। ওনারা তিনজন খুব ভালো বন্ধু।এলএলএম করছেন ড্যাফোডিল থেকেই,ফেসবুকেই পরিচয় ওনাদের সাথে।আগে কখনোই দেখা হয় নি। সেদিন আমাকে তারা কি আদরই না করেছিলেন।আহা! মনে হলো ড্যাফোডিল বুঝি আমাকে বরণ করে নিলো।ভর্তি সংক্রান্ত কাজ শেষ করে বাসায় ফিরে আসলাম।মাঝে আরও একদিন এসেছিলাম হলের সিট এর জন্য।তারপর আসে সেই রাত, যে রাতে আমার ঘুম হচ্ছে না।

একদিকে  নিজের পরিবারকে ছেড়ে নতুন জায়গায় চলে যাওয়া আর অন্যদিকে নতুন ব্যাচমেটদেদর সাথে  দেখা হওয়ার লোভ।উফ! সকাল হলো।সব জিনিসপত্র নিয়ে ড্যাফোডিলের উদ্দেশ্যে পাড়ি জমালাম।অবশে্ষে ড্যাফোডিলে পৌঁছালাম।আম্মুও আমার সবকিছু গুছিয়ে দিয়ে চলে আসলেন বাসায়।

৪জন রুমমেট ,পাশের দুই রুমের ৮ জন মিলে রাত জেগে সে কি গল্প।অবশ্য আমার ঘুম আসছিলো না নতুন জায়গা বলে।তো পরেরদিন ওরিয়েন্টেশন, ডিপার্টমেন্টের সকল ফ্যাকাল্টির সাথে পরিচয়।তারপর দিন থেকে ক্লাসও আরম্ভ হয়ে গেলো।দেখতে দেখতে সাতদিন হয়ে গেলো ড্যাফোডিল সংসারে, শুক্রবারও চলে এলো।

শুক্রবার মানেই তো আম্মুর অফিস ছুটি বাসায় মজার মজার খাবার।কিন্তু নিজে খেতে পারবো না বলে আমরা তিন রুমমেট দুঃখ প্রকাশ করছিলাম।হঠাৎ মাথায় আসলো গ্রিন গার্ডেনে সেট মেন্যুর অফার চলছে।যেই ভাবা সেই কাজ।ফ্রায়েড রাইস,চিকেন ফ্রাই আর  চাইনিজ সবজির প্ল্যাটার টা নিলাম।খাওয়া শেষ কিন্তু কারোরই পেট ভরলো না।মজার ব্যাপার হলো তারপর ডাল আলু ভর্তা দিয়ে আবার বাহিরে যেয়ে ভাতও খেয়েছিলাম আমরা।এই ব্যাপারটা এখনোও মনে পড়লে হাসি পায় আমার।

দেখতে দেখতে ফাউন্ডেশন ডে চলে আসে।ফাউন্ডেশন ডে তে “Catwalk “ করার সুযোগ হয়ে গেলো।তারপর স্বরস্বতী পূজোয় গান করা।এক এক করে আরও প্রোগ্রামে পার্টিসিপেট করা।মাত্র কয়েকদিনের পরিয়চয়ে ক্যাম্পাস টা কতো আপন হতে লাগলো।দেখতে দেখতে মিডটার্ম পরীক্ষাও চলে আসলো।পরীক্ষা শেষে ক্লাস বন্ধ দেওয়ায় আমার রুমমেটদের অধিকাংশই বাসায় গেলেও আমি আর আমার একজন রুমমেট ক্যাম্পাসের

মায়ায় পড়ে একদিন বাসায় থেকেই চলে আসি।কিন্তু হঠাৎ নেটিশ আসলো “কোভিড-১৯” – এর কারণে ক্যাম্পাস কিছুদিনের জন্য বন্ধ থাকবে।বাসায় ফিরে আসলাম।সেই কিছুদিন থেকে কিছু বেশ কিছু মাস,অথচ কবে “করোনার” এই মহামারি কাটিয়ে ক্যাম্পাস খুলবে আমরা কেউই জানিনা।ড্যাফোডিলকে খুব মিস করছি।কারণ আমি হলের যেই ঘরটায় থাকতাম সেই ঘরের ইট-পাথর, চেয়ার-টেবিল নিয়ে আমার একটা সংসার তৈরি হয়ে গিয়েছিলো ড্যাফোডিলের সাথে।

তাই ড্যাফোডিলকে বলতে চাই-
প্রিয় ড্যাফোডিল,
তোমার আমার দেখা হবে মহামারি শেষে
তোমার আমার দেখা হবে জিতে ফিরে এসে।
তোমার আমার দেখা হবে পৃথিবী শান্ত হলে
তোমার আমার দেখা হবে কোনো এক স্নিগ্ধ সকালে।

আকাশে পাখিরা সেদিন খেলা করবে,ক্যাম্পাসে হবে প্রচন্ড ভীড়,
দেখা কিন্তু হবেই আমাদের এ কথাই রইলো স্থির।

ফুড কোর্ট, নলেজ ভ্যালী,গ্রিন গার্ডেন, বনমায়ায়
কোয়ারেন্টাইন শেষে ফিরবো তোমারই ছায়ায়

ক্যাফেটেরিয়ায় সেদিন হবে আড্ডা
গিটার,কফির কাপ আর সাথে থাকবে প্রিয় বন্ধুরা

ড্যাফোডিল আমাদের দেখা হবে এ জীবন জিতলে
আমাদের দেখা হবে মৃত্যু হারলে
আমাদের দেখা হবে দেখা হবে কান্নার ওপারে
আমাদের দেখা হবে সুস্হ শহরে।

Written by
Naushin Tabassom Mati
Student Id: 201-34-271
Department of Nutrition and Food Engineering

MY CAMPUS LIFE -DIU

March 1, 2021