একজন মানুষের মূল্য কিভাবে নির্ধারণ করবেন? এটি কি কেবল তাদের ডিগ্রি বা অ্যাকাডেমিক সার্টিফিকেটের উপর ভিত্তি করে? এক সময় ছিল যখন একজন ব্যক্তির মূল্য প্রধানত তাদের শিক্ষাগত যোগ্যতার ভিত্তিতে মূল্যায়ন করা হতো, বিশেষ করে চাকরির বাজারে। তবে সময়ের পরিবর্তনের সাথে সাথে মূল্যায়নের এই মানদণ্ডও পরিবর্তিত হয়েছে। আজকাল, একজন ব্যক্তির প্রকৃত মূল্য বোঝার একমাত্র উপায় হচ্ছে তাদের দক্ষতা এবং সৃজনশীলতা।

এক কেজি কাঁচা লোহার বাজার মূল্য প্রায় ১,০০০ থেকে ২,০০০ টাকা হতে পারে। কেউ যদি এই কাঁচা লোহার ব্যবসা করে, তবে তাদের আয় সেই মূল্যের ওপর নির্ভর করবে। কিন্তু যদি সেই কাঁচা লোহাকে আসবাবপত্র তৈরিতে রূপান্তরিত করা হয়, তাহলে বিক্রেতা পাঁচ থেকে দশ গুণ বেশি আয় করতে পারবে। আবার, যদি সেই লোহাকে ব্যবহার করে একটি গাড়ি তৈরি করা হয়, তবে আয় ১০০ গুণের বেশি হতে পারে।

এটি দেখায় যে একটি বস্তু কিভাবে এবং কোন কাজে ব্যবহৃত হচ্ছে তা তার মূল্যকে উল্লেখযোগ্যভাবে প্রভাবিত করে। একই পদার্থ থেকে তৈরি হওয়া সত্ত্বেও, এর ব্যবহারে ভিন্নতা মূল্যের পার্থক্য সৃষ্টি করে। এই একই নীতিটি মানুষের ক্ষেত্রেও প্রযোজ্য। ধরুন, একটি কোম্পানিতে অফিসার পদে দুইজন ব্যক্তিকে নিয়োগ দেওয়া হয়, দুজনেরই ডিগ্রি এক।

প্রথম ব্যক্তি তার সুপারভাইজারের যে কাজগুলো তাকে দেওয়া হয়, কেবল সেই কাজগুলো সম্পন্ন করে সময়মতো অফিস থেকে বাড়িতে চলে যায়। তার অন্য কোনো আগ্রহ বা মনোযোগ নেই। অপরদিকে, দ্বিতীয় ব্যক্তি শুধু তার সুপারভাইজারের কাজের উপর নির্ভরশীল নয়; বরং সে কোম্পানির বিভিন্ন সেক্টর সম্পর্কে জানতে শুরু করে। সে সুন্দর কর্পোরেট সম্পর্ক তৈরি করে এবং তার কাজের সেক্টরের সঙ্গে অন্যান্য সেক্টরের সংযোগ ঘটিয়ে পেশাগত দক্ষতা উন্নয়ন ও কোম্পানির রাজস্ব বৃদ্ধিতে অবদান রাখার পথ তৈরী করে।

এখন, যদি এক বছর পর এই দুই ব্যক্তির বার্ষিক প্রতিবেদন, মূল্য সংযোজন ও অবদানের তালিকা করা হয়, তবে দেখা যাবে যে দ্বিতীয় ব্যক্তি এগিয়ে থাকবে। এই উদাহরণটি প্রমাণ করে যে, আপনার সার্টিফিকেট বা ডিগ্রী যাই হোক না কেন, আপনি কোম্পানির যে পজিশনেই থাকুন, দিন শেষে আপনার প্রকৃত মূল্যায়ন হবে আপনার কাজের মানসিকতা, উদ্ভাবনী উদ্যোগ, নেতৃত্বের গুণাবলী, সৃজনশীলতা এবং কোম্পানিতে আপনার অবদানের মাধ্যমে।

সুতরাং, যদি আপনি আপনার ডিগ্রী ও পজিশন নিয়ে হতাশা অনুভব করেন, তবে নিজের উন্নয়নে মনোযোগ দিন। নিজের হার্ড স্কিলগুলো উন্নত করুন, সৃজনশীলতা বাড়ান এবং নতুন দায়িত্বের ঝুঁকি নিয়ে নেতৃত্বের গুণাবলী প্রদর্শন করুন। নতুন নতুন উদ্ভাবনী উদ্যোগ গ্রহণের মাধ্যমে আপনার সিদ্ধান্ত গ্রহণের দক্ষতা বিকাশ করুন এবং এই সব কিছু মিলিয়ে চেষ্টা করুন আপনার কাজকে কোম্পানির রাজস্ব বৃদ্ধির সঙ্গে সংযুক্ত করতে।

এভাবে নিজেকে গড়ে তুলতে পারলে, আপনার ক্যারিয়ার উন্নয়ন নিয়ে চিন্তা করতে হবে না; তখন আপনার কোম্পানির ওপর এই দায়িত্ব পড়বে।

তাহলে, ভাবুন, আপনি কি কাঁচা লোহা হিসেবে থাকতে চান, অবমূল্যায়িত ও অব্যবহৃত, নাকি আপনার সর্বোচ্চ ব্যবহার করে ক্যারিয়ারের শীর্ষ পজিশনে উন্নীত হতে চান? সিদ্ধান্ত আপনার।