করোনাার দ্বিতীয় ঢেউ মোকাবেলায় শিক্ষার্থীদের জন্য স্বাস্থ্য বিষয়ক কিছু গুরুত্বপূর্ন পরামর্শ – মোঃ আনোয়ার হাবিব কাজল
সুপ্রিয় শিক্ষার্থীবৃন্দ
করোনা অতিমারি গোটা মানবসমাজকে বিপর্যস্ত করে দিয়েছে। আমরাও সেই বিপর্যয়ের অংশীদার। এ পর্যন্ত সকল মহমারি থেকে করোনা অতিমারী ব্যতিক্রম। অন্য যে কোনো ভাইরাসের চরিত্র ও এর গতিপ্রকৃতি বিজ্ঞানীরা নির্ণয় করতে পারলেও কিন্তু করোনাকে মোটেও নাগালে আনতে পারেননি। হতবাক করে দিয়ে তা বিস্তৃত হয়ে গোটা মানবজাতিকে নাকাল বানিয়ে দিয়েছে। ইতোমধ্যে উৎকন্ঠা,আতঙ্ক ও দুঃস্বপ্নে এক বছর অতিক্রম করলেও আবার আলোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে করোনার দ্বিতীয় ঢেউ বা সেকেন্ড ওয়েভ। সরকারের উচ্চপর্যায়সহ বিভিন্ন মহল থেকে প্রস্তুতির তোড়জোড় চলছে এখন থেকেই করোনার দ্বিতীয় ঢেউ মোকাবেলার জন্য।
আইসোলেশন, কোয়ারেনটাইন, সেলফ-কোয়ারেনটাইন, সোস্যাল ডিসট্যান্স, লকডাউন এসব শব্দ অভিধানে থাকলেও এদেশের জনসমাজে এর আগে ব্যাপকভাবে প্রচলিত হয়নি। আস্তে আস্তে করোনা মহামারি ব্যবস্থাপনা ও পরিস্থিতির সাথে খাপ খাইয়ে নিচ্ছে সকলে। আইসোলেশন, সামাজিক দূরত্ব বাস্তবায়ন ও পালন করতে অন্য দেশসমূহের মতো বাংলাদেশে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধ করতে হয়েছে। ইউনেস্কোর তথ্য অনুযায়ী ১৯০টি দেশের ১.৫ বিলিয়ন শিক্ষার্থী এখন প্রতিষ্ঠান বিচ্ছিন্ন ও বাড়িতে অবস্থান করছে। তারা এখন খেলার মাঠে বা বাইরে যেতে পারছে না। কোনো বন্ধু বা সহপাঠীর সাথে সময় কাটাতে পারছে না। ক্ষেত্র ও অবস্থা বিবেচনায় শুধু ভার্চুয়াল যোগাযোগ চলমান রয়েছে।
শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে লেখাপড়ার সাথে সংস্কৃতিচর্চা, আড্ডা, হৈচৈ, খেলাধুলা করে আনন্দের সাথেই শিক্ষার্থীদের সময় কাটতো। করোনাকালে এসব থেকে বঞ্চিত হওয়ার সাথে সাথে বাইরের কার্যক্রম থেকেও শিক্ষার্থীরা বিচ্ছিন্ন হয়ে গেছে। বাধ্য হয়েই ঘরে থাকতে হচ্ছে, ইচ্ছে হলে বা সুযোগ থাকলেও একটু সময়ের জন্য ঘরের বাইরে যাওয়া নিরাপদ নয়। এখন শিক্ষার্থীদের কাছে বিনোদন, আনন্দ বলে কিছু নেই। এ সংকটে শিক্ষার্থীদের দীর্ঘকালিন ক্ষতির সম্ভাবনা বিবেচনায় অনলাইন পাঠদান শুরু হয়েছে। যেটুকু জানা যায় শিক্ষার্থীরা অনলাইন পাঠদানকে ভালোভাবে গ্রহণ করেছে ও উপকৃত হচ্ছে।
আমরা সবাই জানি, শিক্ষা ও জ্ঞান অর্জন শুধু পাঠদানের উপর নির্ভর করে না। পরস্পর মিথস্ক্রিয়া বলে একটা কথা আছে। এখন এটা হচ্ছে না। বাইরের আলোবাতাসে শিক্ষার্থীরা দৌড়াদৗড়ি করছে না। ক্লান্ত হচ্ছে না। যা-কিছু শিক্ষারই অংশ। এ গৌণ কাজগুলোই মূল শিক্ষাকে প্রণোদিত করে এবং রাষ্ট্র ও সমাজে দায়বদ্ধ হতে শেখায়, মানুষের প্রতি দায়িত্ব পালনে নিজের প্রস্তুতিতে সহায়তা করে।
করোনা সমস্যার কারণে শিক্ষার্থীরা এখন জীবনবাস্তবতা ও প্রকৃতি থেকে বিচ্ছিন্ন। তা দীর্ঘ হচ্ছে বলেই সমস্যা। স্বভাবতই শিক্ষার্থীদের মতো তরুনদের ‘ট্রমা’য় আক্রান্ত হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। পৃথিবীর মহামারির বাস্তবতা, মানুষের দুঃখ, কষ্ট, দহনের দৃশ্যাবলি দেখে অনেকে হতাশায় নিমজ্জিত হতে পারো। আমরা লক্ষ্য করেছি, পীড়াদায়ক ঘটনার চাপে সাধারণ ব্যক্তি-মানুষের মধ্যে মনোদৈহিক যন্ত্রণা তৈরি হয়। তবে সকলের পক্ষে একইভাবে ঘটনার ঘাত সামলানো সম্ভব হয় না। সেক্ষেত্রে কোনো ব্যক্তি গভীর বাস্তবতায় মানসিক যন্ত্রণা অনুভব করে এবং এ থেকে সৃষ্টি হয় উদ্বেগ, বিমর্ষতা, ক্রোধ, অপরাধবোধ, বিষন্নতার। ফলত, সে তার চারপাশে কোনো কিছুতে বিশ্বাস রাখতে পারে না। নিজেকে ভাবে অবনমিত এক সত্ত¡া।এ থকে শারীরিক কিছু অসংগতিও শুরু হয়। এ বিষয়কেই আমরা বলি ‘ট্রমা’।
এ ‘ট্রমা’ ছাড়াও মনোবিজ্ঞানী ও আচরণবিজ্ঞানীরা সংগনিরোধ ও সামাজিক দূরত্ব থেকে সৃষ্ট বিষন্নতা, ভয় আতঙ্ক, বিরক্তিবোধ, ক্রোধ, বিচ্ছিন্নতা, নৈঃসঙ্গ, অবহেলা, অবনমন, নিরর্থকতা ভাবনার ওপর গুরুত্বারোপ করেছেন। যা থেকে মানুষের মধ্যে অনিদ্রা, অনীহা, বিরোধ, অবসন্নতা, অসুস্থতা ইত্যাদি তৈরি হয়। ওই ভাবনা থেকেই বলতে চাই- করোনা প্রতিরোধের সাথে আগামী প্রজন্মের ক্ষেত্রে যতœবান হওয়া রাষ্ট্র, সমাজ, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ও পরিবারের এখন দায়িত্ব। এজন্য সংগনিরোধকালে শিক্ষার্থীদের প্রতি আলাদা নজর রাখা প্রয়োজন। পরিবারের সাথে ভাববিনিময়ে সময় দেওয়া, কথা বলার চেয়ে বেশি শোনা এবং যৌক্তিকভাবে বিদ্যমান পরিস্থিতি অবহিত করা প্রয়োজন। মনে রাখতে হবে, মানসিক দূর্বলতা শিক্ষার্থীদের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কমিয়ে দিতে পারে।
মহামারী করোনা ভাইরাসে প্রায় সবাই ঘরে বন্দী। সময় কাটছে আলস্যে। ফলে কর্মহীন শরীরে জমছে বাড়তি মেদ। তার ওপর করোনা প্রতিরোধে এই সময়ে দরকার রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতার সক্রিয়তা। মহামারি করোনার হাত থেকে বাঁচার মতো এখনও কোনো ওষুধ আবিষ্কৃত হয়নি। চিকিৎসকরা বলছেন, শরীরের ইমিউনিটি বাড়ানো তথা রোগ প্রতিরোধক্ষমতা বাড়ানোই করোনা থেকে বাঁচার একমাত্র উপায়। এজন্য নিয়মিত ব্যায়াম করার পরামর্শ দিচ্ছেন চিকিৎসকরা। তাদের মতে, সংক্রমণ হলে যেমন ‘ইমিউন সিস্টেম’ শরীরের তাপমাত্রা বাড়িয়ে জীবাণুর বংশবিস্তার থামানোর চেষ্টা করে, ঠিক সেভাবেই ব্যায়াম করলে শরীরের তাপমাত্রা বেড়ে যায় বলে জীবাণুর অতিবিস্তার হতে পারে না খুব একটা। বেশ কিছু ঝামেলা বিহীন ব্যায়ামে শিক্ষার্থীরা বাড়িয়ে নিতে পারো তোমাদের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বা ইমিউনিটি। কাজেই শুয়ে-বসে না থেকে দিনভর সচল থাকতে হবে। বাড়াতে হবে ব্যায়ামের পরিমাণও।
কী ধরনের ব্যায়াম করতে হবে?
ব্যায়াম বলতে কেউ হয়তো নিয়মিত একটু জোরকদমে হাঁটছে বাড়ীর আঙ্গিনায়, ছাদে বা খোলা মাঠে। আবার কেউ করে যোগাসন আবার কেউ কেউ সুবিধামত পুকুরে গোসলের সময় সাঁতার কাটে। কিন্তু তাতে পুরো কাজ কখনো হয় না। ঠিক কী কী করলে শরীরের প্রয়োজনীয় ওয়ার্কআউট হয় তা জানতে হবে।বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা ও আমেরিকান কলেজ অব স্পোর্টস মেডিসিন থেকে জানানো হয়েছে, ১৮ থেকে ৬৪ বছর বয়স্ক সুস্থ ও ফিট মানুষের সপ্তাহে ১৫০ মিনিট মাঝারি গতিতে বা ৭৫ মিনিট জোর গতিতে অ্যারোবিক ব্যায়াম করা দরকার।
সপ্তাহে ২ থেকে ৩ দিন করতে হবে পেশীর শক্তি বাড়ানোর ব্যায়াম।অ্যারোবিক এক্সারসাইজ বলতে হাঁটা, জগিং, সাইকেল চালানো, স্কিপিং, সাঁতার কাটা ইত্যাদি বোঝায়। এই লকডাউনে তা করবে কীভাবে! তাই বাসার ছাদে অথবা বাড়ীর পাশের খোলা উঠানে হাঁট, স্পট জগিং কর., স্পট স্কিপিং করতে পারো বা সম্ভব হলে স্ট্যাটিক সাইকেল চালাতে পারো।সাধ্যমতো জোরে হাঁটলে হার্ট ও ফুসফুসের বেশি উপকার হয়।
টানা ২০-৩০ মিনিট। টানা না পারলে সকালে ২০ মিনিট ও বিকেলে ২০ মিনিট হাঁটবে।রোগ প্রতিরোধক্ষমতা বাড়ানোর জন্য সব ধরনের ব্যায়ামের মধ্যে যেটি সবার প্রথমে আসে সেটি হলো যোগব্যায়াম। কারণ যোগব্যায়ামের মাধ্যমে একই সঙ্গে শারীরিক সুস্থতা ও মানসিক প্রশান্তি লাভ করা যায়। যোগব্যায়ামে আমাদের শুধু হাত, পা, পেটের মাংসপেশির ব্যায়ামই হয় না, আমাদের শরীরের ভেতরে গুরুত্বপূর্ণ অঙ্গপ্রত্যঙ্গের (যেমন মস্তিষ্ক, হৃৎপিÐ, ফুসফুস, যকৃত, পাকস্থলী, কিডনি প্রভৃতি) বলতে গেলে সব সূ²াতিস² অংশের ব্যায়াম হয়।
যোগব্যায়ামকে এখন শুধু ব্যায়াম বললে ভুল হবে; বরং এটি একটি চিকিৎসাপদ্ধতিও বটে। ইউটিউব বা ফেসবুকে জনপ্রিয় চ্যানেলগুলো দেখেও শিক্ষার্থীরা ঘরে বসে যোগব্যায়াম শিখতে পারে।সাঁতার কাটা, জিমে যাওয়া বা দৌড়ানোর জন্য বাইরে বের হওয়ার অবস্থা বা সুযোগ না থাকলে শিক্ষার্থীরা ঘরে বসেই বিভিন্ন ধরনের ফ্রি হ্যান্ড এক্সারসাইজ করতে পারে। যেমন ওঠবস, বুক ডন (পুশ আপ) বেলি বা সিট আপ, জাম্পিং জ্যাক, বারে ঝোলা বা পুল আপসহ বিভিন্ন ধরনের ব্যায়াম করতে পারে। এসব ব্যায়াম ওজনও ঠিক রাখে, শরীর ঝরঝরে করে এবং কাজকর্মে গতি আনে।স্ট্রেচিং কী ভাবে করতে হয় তা কমবেশি সবাই জানে। বিশেষ কিছু নয়, শরীরের প্রতিটি পেশীসন্ধিকে সচল রাখার হালকা ব্যায়াম। পা-কোমর-শিরদাঁড়া, ঘাড়ের স্ট্রেচিং এই সময় খুব কাজে আসবে। কোনও ব্যথা-বেদনা বা অস্থিসন্ধি ও পেশীর বড় কোনও সমস্যা না থাকলে করতেই পারো।ইদানীং কয়েকটি নতুন ধরনের ব্যায়ামের ধারা চালু হয়েছে যাতে সুরের তালে তালে অ্যারোবিক্সের সঙ্গে স্ট্রেচিং, ব্যালেন্সিং, স্ট্রেংথ ট্রেনিং, সব হয়ে যায়। সে রকমই একটি হল টাবাটা। তোমরা যেহেতু বয়সে তরুন, ফিটনেস থাকলে টাবাটা করা যেতেই পারে।জুম্বা করতে পারো। যারা নিয়মিত জুম্বা করো এই সময় তা ছেড়ে দেবে না। জুম্বাতে তোমার শরীর যেমন ভাল থাকবে, মনও হালকা হবে একটু।এর পাশাপাশি বেশির ভাগ সময় সচল থাকার চেষ্টা কর। এক জায়গায় টানা বসে থাকার অভ্যাস হলে ব্যায়ামের ফল সেভাবে পাবে না।
করোনাকালে পরিবারের সদস্যদের প্রতি দয়া ও মর্মবোধ প্রকাশ করা, যে কেনো কাজে সহযোগী হওয়া, শুভ বিবেচনা বিনিময় করা, পরিবারের সকলকে নিয়ে অপরের মঙ্গলচিন্তা আলোচনা এবং সমমর্মিতার বিষয়গুলোকে সামনে নিয়ে আসা প্রতিটি শিক্ষার্থীর একান্ত কর্তব্য। এক্ষেত্রে একবিংশ শতাব্দীর শিক্ষাচিন্তা ও এসডিজি-৪ বাস্তবায়নে যেসব নমনীয় দক্ষতার কথা বলা হয়েছে, সেগুলো আমরা বাড়িতে চর্চা করতে পারি। এগুলো হলো: যোগাযোগ (communication), আত্মপ্রণোদনা self-motivation), বিশ্বাসযোগ্যতা trustworthiness), শৃঙ্খলা (discipline), সৃজনশীলতা ও গাঠনিক চিন্তা (creativity and critical thinking), উপযোগিতা (adaptability), দায়িত্ববোধ (accountability), ও সমমর্মিতা (empathy)। উপর্যুক্ত বিষয়গুলো সামাজিক ও আবেগীয় শিক্ষা social-emotional learning)-র অন্তর্ভুক্ত বটে। এজন্য স্ট্রেস ও ট্রমা ব্যবস্থাপনায় ইউনেস্কো সামাজিক ও আবেগীয় শিক্ষার কৌশলসমূহ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ব্যবহারের সুপারিশ করেছে।
পরিশেষে এটাই বলব, প্রতিদিন কমপক্ষে ১৫ মিনিট শিক্ষার্থীদের শারীরিক ব্যায়াম করা উচিত, যা তাদের রোগ প্রতিরোধক্ষমতা বাড়িয়ে সুস্থ স্বাভাবিক জীবন ধারণে অনুপ্রাণিত করবে। বিশেষত বর্তমানের এই সময়ে। কারণ করোনার জন্য আমাদের প্রতিদিনের রুটিনে নানা পরিবর্তন এসেছে। অনেক কিছুই ওলটপালট হয়ে গেছে। কেবল শারীরিক নয়, মানসিক চাপও যথেষ্ট প্রভাবিত করেছে। এর নেতিবাচক প্রভাব পড়ছে আমাদের শরীর ও মনে। ফলে ব্যায়াম আমাদের এই পরিস্থিতি থেকে উত্তরণে বিশেষ ভূমিকা রাখতে পারে।
আর একটি কথা শিক্ষার্থীরা বিশেষভাবে মনে রাখবে, বাসা থেকে বের হলে অবশ্যই মাস্ক এবং হ্যান্ড স্যানিটাইজার ব্যবহার করবে আর ঘরে ফিরে হ্যান্ড ওয়াশ দিয়ে ভাল করে হাত ধুঁয়ে নিবে। সর্বাবস্থায় করোনাকালের স্বাস্থ্য সুরক্ষা বিধি মেনে চলবে। নিজে নিরাপদে থাকবে এবং পরিবারকে নিরাপদে রাখবে।
লেখকঃ
মোঃ আনোয়ার হাবিব কাজল
ঊর্ধ্বতন সহকারি পরিচালক ( জনসংযোগ)
ড্যাফোডিল ইন্টরন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি
MOST COMMENTED
Bangladesh Football
Bodybuilding exercise techniques and guide lines
JMC DIU Career Related Show “Career Today” is @ RTV
Study Visit from CDC
DIU achieves World Quality Commitment (WQC) Award-2010
Tree Plantation Program at DIU Permanent Campus Plot, Ashulia
Most Spoken Languages In The World