করোনা পরবর্তী সময়ে শিক্ষা পদ্ধতি। চতুর্থ শিল্পবিপ্লব এবং ড্যাফোডিল আন্তর্জাতিক বিশ্ববিদ্যালয় এর ব্লেন্ডেড লার্নিং সিস্টেমের স্বার্থকতা। 

প্রায় বেশ কয়েক মাস আগে আমার এক পরিচিতার সাড়ে চার বছর বয়সী বাচ্চাকে জিজ্ঞেস করলাম, “তুমি কোন স্কুলে পড়ো?” উত্তরে সে বলেছিল, “আমি অনলাইন স্কুলে পড়ি।” 

উত্তরটা শুনে কিছুটা থমকে গেলেও বুঝতে বাকি ছিলো না যে এই বাচ্চাটার শিক্ষা জীবন শুরুই হয়েছে অনলাইন প্লটফর্মে। ওর কথার মধ্য দিয়েই মনে পরে গিয়েছিল, ২০২০ সালের মার্চ মাসের কথা। যখন পুরো দুনিয়া করোনা নামক ভাইরাসে জর্জরিত তখন লাখো লাখো শিক্ষার্থীদের লেখাপড়া অনিশ্চিত হয়ে পরলো। তখন ড্যাফোডিল আন্তর্জাতিক বিশ্ববিদ্যালয় পুরোদমে শুরু করেছিল তাদের অনলাইন পড়াশোনা। যদিও শুরুটা অতটা সহজ ছিল না। ডিভাইসের অপ্রতুল্যতা, নেটওয়ার্ক সমস্যা, অপর্যাপ্ত জ্ঞান, নেতিবাচক মনোভাব আর অনেক সমস্যার সম্মুখিন হতে হয় আমাদের। অনলাইন পড়াশোনার প্রতি শিক্ষার্থী আর কিছু শিক্ষকদের ছিল নেতিবাচক মনোভাব। যাইহোক, সেই অনলাইন পড়াশোনা চললো প্রায় দু বছর।

কিন্তু কিভাবে?

ড্যাফোডিল আন্তর্জাতিক বিশ্ববিদ্যালয় এর ব্লেনডেড লার্নিং সেন্টার (বি.এল.সি) আমাদের শিক্ষার্থীদের একটা দিনও নষ্ট হতে দেয় নি তাদের মূল্যবান শিক্ষা জীবন থেকে। “ওয়ান স্টুডেন্ট ওয়ান ল্যাপ্টপ” প্রোগ্রামের আওতায় ভর্তির সময় শিক্ষার্থীদের দেয়া হয়েছিল ল্যাপ্টপ যাতে শিক্ষার্থীদের কোন রকম ডিভাইস সমস্যার সম্মুখিন হতে না হয়। দেয়া হয়েছিল করোনা প্রোনদনা। ড্যাফোডিল আন্তর্জাতিক বিশ্ববিদ্যালয়ের অথরিটির যুগপযোগী সিদ্ধান্ত তাদের শিক্ষার্থীদের শিক্ষাজীবন বাধাপ্রাপ্ত হতে দেয় নি চরম এই দূযোগের মধ্যে যখন পুরো দুনিয়া হিমসিম খাচ্ছিল। অনলাইন ভীতি থেকে ছাত্র-শিক্ষকদের বের করে আনার জন্য অক্লান্ত পরিশ্রম করেছে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ এবং সবাইকে বিভিন্ন ট্রেইনিং এর মাধ্যমে শিক্ষা ও শিখন পদ্ধতি ভালোভাবে চালিয়ে যেতে বিভিন্ন ওয়ার্কশপ, সেমিনার, ওয়েবিনারের আয়োযন করেছে এবং এখনো করে যাচ্ছে ড্যাফোডিল আন্তর্জাতিক বিশ্ববিদ্যালয় হিউম্যান রিসোর্স ডিভালপমেন্ট ইন্সটিটিউড (এইচ আর ডি আই)। বি এল সি তে রয়েছে স্বংসম্পূর্ণ অনলাইন কোর্স যেগুলি এই বিশ্ববিদ্যালয়ের সম্মানিত বিজ্ঞ শিক্ষকদের অক্লান্ত পরীশ্রমের ফসল যার জন্য প্রতিটি শিক্ষার্থী তাদের বিশ্ববিদ্যালয় জীবনে প্রতিটি কোর্স স্বয়ংসম্পূর্ণভাবে সফলতার সাথে শেষ করতে পেরেছে।  অনেক বাধা, বিপত্তি পেড়িয়ে আজকে আমরা চলে এসেছি কভিড পরবর্তী সময়ে।

তাহলে কি এখন বন্ধ হচ্ছে অনলাইন শিক্ষা? তথাকথিত শিক্ষা ব্যবস্থায় ফিরে গিয়েছি বা যাচ্ছি আমরা?

এর উত্তর “না।” এই রকম উত্তরের পিছনের কারণ জানার জন্য কিছু প্রশ্নের উত্তর খুজে বের করতে হয়েছিল আমাদের।

প্রথমত, শিক্ষকশিক্ষার্থীদের কি চাওয়া?

আমি আমার শিক্ষার্থীদের সাথে অনেক বেশি বন্ধুসুলভ হবার খাতিরে ওদের চাওয়া, পাওয়া, সুযোগ সুবিধা সম্পর্কে আমি অনেক কাছ থেকে জেনেছি। শুরুর দিকে ওরা যেমন অনেক বাধা অতিক্রম করেছে আর আমরা শিক্ষকরা খুব নমনীয়তার সাথে সেগুলি সমাধান করার চেষ্টা করেছি। ঠিক তেমনি এখন আমাদের এক মাত্র চাওয়া ওদের কি চাওয়া? এই উত্তরের জন্য আমি কথা বলেছি ওদের সাথে৷ ওদের সিংহ ভাগেরই উত্তর ছিল, অনলাইন যেন পুরোপুরি বন্ধ না হয়ে যায়। আবার ক্লাস রুমে বসে ক্লাস করাটাও তাদের এক অন্যরকম চাহিদা। তাহলে উপায়? ওদের উত্তর ছিল “অফলাইন আর অনলাইন কে সমন্বয় করা হোক।” কিন্তু শিক্ষকদের কি মতবাদ? শুরুর দিকে কষ্ট করতে হলেও এখন মানিয়ে নিয়ে নতুন স্বাভাবিককে স্বাগত জানাচ্ছে সম্মানিত শিক্ষকরা৷ তাই দু পক্ষেরই দাবি, “ব্লেনডেড লার্নিং।” 

চতুর্থ শিল্পবিপ্লব এবং ব্লেন্ডেড লার্নিং

আমরা সবাই ইতোমধ্যে চতুর্থ শিল্পবিপ্লবের মধ্য দিয়ে যাচ্ছি। এই শিল্পবিপ্লবের সময়ে বদল এসেছে সবকিছুতে। চিকিৎসা, বিজ্ঞান, শিল্প, সাহিত্য, ধ্যান-ধারনা, জীবন যাপন এর পদ্ধতি সব কিছুতে এসেছে এক আমূল পরির্তন। তাহলে এর সাথে সাথে কি শিক্ষাইয় বদল অপ্রত্যাশিত? অবশ্যই না। কিন্তু সেই বদল হতে হবে জীবনমুখী, বাস্তবধর্মী এবং ইতিবাচক। চতুর্থ শিল্পবিপ্লবের এই দুনিয়ায় বিশ্বের সাথে তাল মিলিয়ে চলতে আমাদের শিক্ষাব্যবস্থা হতে হবে যুগপযোগী। আর এই ধরনের শিক্ষার প্রতিটি চাহিদা পূরণ করতে সক্ষম ব্লেন্ডেড লার্নিং। জীবকে বাদ দিয়ে শিক্ষা নয়, আবার শিক্ষাকে বাদ দিয়ে জীবন নয়। ব্লেন্ডেড লার্নিং যেকোন দূর্যোগপূর্ণ সময়ে আমাদের পিছিয়ে পরতে দিবে না, এই ধরনের শিক্ষা বাস্তবতা বিবর্জিত নয় এবং এর ইতিবাচক প্রভাব পরেছে বর্তমান সময়ের অদলবদলের এক সন্ধিঃক্ষণে। 

কিভাবে

খুবই সহজ উত্তর। অনলাইন আর অফলাইন শিক্ষার ভালো দিকগুলি একসাথ করে নতুন এক শিক্ষা ব্যাবস্থা যার দরুন আমাদের ডিজিটাল বাংলাদেশ গড়ার প্রত্যয় এগিয়ে যাবে দূরন্ত গতিতে। আর সে শিক্ষা হচ্ছে ব্লেন্ডেড লার্নিং শিক্ষা।  আর এই ধরনের শিক্ষা ব্যবস্থা ইতিমধ্যে চালু করেছে ড্যাফোডিল আন্তর্জাতিক বিশ্ববিদ্যালয়।

পরিশেষঃ

এই শিক্ষা ব্যবস্থাকে কাজে লাগিয়ে দেশের সকল স্তরের শিক্ষা ব্যবস্থা এগিয়ে যাবে যাতে ভবিষ্যতে এমন কোন অনাকাঙ্ক্ষিত দূর্যোগের মুখোমুখি হলে যাতে সকল শিক্ষার্থীদের জীবন এগিয়ে চলবে কোন বাধা ছাড়া। আর কোন বাচ্চাকে যদি ভবিষ্যতে জিজ্ঞেস করা হয়, “তুমি কোন স্কুলে পড়ো?” তার উত্তরে আমরা এমন কোন কিছু আশা করবো যেটা আমাদের বুঝিয়ে দেবে যে আমরা নতুন এই ব্লেনডেড লার্নিং পদ্ধতি কাজে লাগিয়ে এগিয়ে এসেছি কতদূর৷

Writer’s biography: Emran Khan, Lecturer, Department of English, Daffodil International University. Get Mevlana Scholarship (Turkish fully funded Scholarship).