“নিরব কম্পিউটার সায়েন্সের ছাত্র সে ইউনিভার্সিটিতে এক দুই সেমিস্টার কনন্টিনিউ করার পর সে বুঝতে পারলো সিএসই এর পরিধি অনেক বড়। এখানে বিভিন্ন দিকে ভালো করার সুযোগ আছে,বিভিন্ন স্কিল ডেভেলোপ করার সুযোগ আছে,আজকে এক ফ্রেন্ডকে দেখলো সে এন্ড্রয়েডে কাজ করছে এজন্য তার এইটা শিখতে ইচ্ছে হইলো আবার কালকে দেখলো এক ফ্রেন্ড জাভা শিখতেছে সে আবার সেইটা শিখা শুরু করলো ।সে এক স্কিল থেকে আর এক স্কিলের দিকে এভাবে মুভ করতে থাকলো । এক সময় তার গ্রাজুয়েশন শেষ হলো কিন্তু সে নিজের কাছে প্রশ্ন করে দেখলো সে অনেক কিছু অল্প অল্প পারে কিন্তু কোনো কিছুতেই সে অনেক ভালো পারে না। আমরা অনেকেই এমন সিচুয়েশনের মধ্য দিয়ে যাই বা যাচ্ছি ,আমি নিজেও এই সমস্যা ফেস করেছি আমার ছোট জীবনের ক্ষুদ্র কিছু অভিজ্ঞতাকে একত্রিত করে এই ব্লগটা লেখার চেষ্টা করেছি।

আমাদের তথ্য প্রযুক্তির যুগে আমাদের চিন্তা ভাবনা গুলো অনেক বিক্ষিপ্ত। আর আমাদের প্রধান যে সমস্যা স্কিলগত দিক দিয়ে,❝Jack of everything master of everything. ❞ কম্পিউটার সায়েন্স রিলেটেড শিক্ষার্থীদের জন্য এই লেখাটা বেশি উপকারী হবে। আমি জেনারালাইজড করে লেখার চেষ্টা করবো যেন সবাই উপকৃত হতে পারে। আমাদের শিক্ষাব্যবস্থা ক্ষেত্রের ও যেটা হয়েছে বর্তমান অবস্থায় আমাদেরকে একইসাথে অনেক বিষয় অল্প অল্প করে শিখানো হয় বাট আমাদের সঠিক পরিকল্পনা আর কর্মপন্থার অভাবে আমরা সে স্কিলগুলোতে ভালো করতে পারি না। অবশেষে আমাদের স্টুডেন্ট লাইফ শেষে আমাদের অনেকের বলার মতো একটা স্কিল থাকে না যেটাতে আমরা আসলেই এক্সপার্ট। আমি এই বিষয়টা নিয়েই আলোচনা করবো। ”

আমরা যদি এটলিস্ট একটা স্কিলে অনেক দক্ষতা অর্জন করতে পারি তাহলে পুরো লাইফ এইটার উপরে অতিবাহিত করতে পারি। অবশ্যই একজন মানুষ একাধিক বিষয়ে স্কিলড হতে পারে। শুরুর দিকে আমরা যে কাজটা করতে পারি, আমার প্যাশনকে খুঁজে বের করতে পারি। যদি আমার প্যাশন না থাকে সেক্ষেত্রে একাধিক বিষয়ে কিছুদিন সময় দিয়ে দেখতে পারি কোনটাতে আমি কমফোর্ট ফিল করছি কোনটাতে কাজ করে মজা পাচ্ছি। প্যাশন চয়েজ করার ক্ষেত্রে বিভিন্ন প্যারামিটার থাকতে পারে সেগুলোর বিষয়ে এই লেখায় লিখছি না। এই প্রসেস এপ্লাই করার পর আপনি বুঝতে পারলেন আপনার Web Development ভালো লাগে। অতঃপর আপনার কাজ হবে এই বিষয়ে কিভাবে এক্সপার্ট হওয়া যায় সে বিষয়ের মধ্য দিয়ে যাওয়া। এক্ষেত্রে আপনি প্রথম যে কাজটা করতে পারেন এমন কাউকে খুঁজে বের করা যে ওয়েব ডেভেলপমেন্টে আসলেই অনেক ভালো এই পথটা পাড়ি দিয়েছে।তার থেকে আপনি এপথে পাড়ি দেওয়ার একটা ভালো গাইডলাইন পেতে পারেন। একটা বিষয়ে ষ্কিলড হতে হলে আপনি পুরা বিষয়কে বিভিন্ন মডিউলে ভাগ করে নিতে পারেন। তারপর সে মডিউলগুলোর জন্য সময় ফিক্সড করে নিবেন,এতোদিনে আমাকে এইটা শেষ করতে হবে,আমাদের শর্ট টার্ম এবং লং টার্ম গোল থাকতে হবে। আমি দৈনিক কতটুকু কাজ করলে আমার লং টার্ম গোলটা অর্জন করতে পারবো। এক্ষেত্রে আপনাকে SMART রুলস এপ্লাই করতে হবে(Specific, Measurable, Attainable, Relevant and Time-bound). আমাদের কাজের ট্র্যাক রাখতে হবে যেন আমরা তুলনা করতে পারি আমরা আগাচ্ছি কি না ডে বাই ডে। মাঝে মাঝে নিজেকে পুরস্কৃতও করতে পারেন এই কাজটা শেষ করলে আমি আজ নিজেকে এই পুরস্কার দিতে পারবো হতে পারে কাচ্চি খাবো।

দ্বিতীয়ত আমরা কোন রিসোর্স থেকে শিখবো এইটা নিয়ে সমস্যায় পড়তে পারি। শেখার ক্ষেত্রে আপনি যদি বই,আর্টিকেলস,ভিডিও, ওয়েবসাইট মিলিয়ে আগান তাহলে ভালো হয়। সবসময় আপনি একটা রিসোর্স থেকে সব ভালো কনটেন্ট পাবেন না। এই স্টেপকে আপনি তিনটা ভাগে ভাগে ভাগ করতে পারেন বিগিনার, ইন্টারমিডিয়েট, এক্সপার্ট। বিগিনার লেভেলে আপনি সহজ কনটেন্ট দিয়ে শুরু করবেন,যদি আপনার ইংরেজি কনটেন্ট পড়তে বুঝতে কষ্ট হয় তাহলে সেইম বিষয়ে বাংলা কনটেন্ট দিয়ে শুরু করতে পারেন। সবচেয়ে ভালো হয় আপনি শর্ট কোনো কোর্স দিয়ে শুরু করতে পারেন। এই ধাপে আপনি সার্চ করতে পারে (The best website/channel/books for learning.. your- topics). তারপর সে রিসোর্স অনুযায়ী কাজ করতে থাকা।সবচেয়ে ভালো হয় যে জিনিসগুলো শিখবেন সেগুলোর টপিকসটা লিখে রাখা। আর ছোট একটা প্রজেক্টও করতে পারেন, আপনার এক সপ্তাহ বা কয়েকদিনের কাজগুলোকে একত্রিত করে। আপনার কাজগুলোকে সোস্যাল মিডিয়া বা ওপেন প্ল্যাটফর্মে শেয়ার করতে পারেন এতে করে আপনি বিভিন্ন পরামর্শ পেতে পারেন। আর আপনি যে বিষয়ে দক্ষ হতে চান, আপনার চারপাশ সে বিষয় দিয়ে ঘিরে রাখলে ভালো হবে, যেমন ফেসবুকের ক্ষেত্রে আপনি আপনার কাঙ্ক্ষিত বিষয়ের গ্রুপগুলোতে যুক্ত হবেন, বিভিন্ন ফোরামে যুক্ত হতে পারেন আবার আপনার সার্কেলে সে রিলেটেড মানুষ থাকবে যারা সে বিষয়গুলো নিয়ে আলোচনা করে ।

যেকোন বিষয়ে স্কিলড হতে হলে আপনাকে অবশ্যই ধৈর্যশীল হতে হবে, অনেক সময় অনেক বাধা-বিপত্তি আসবে তারপরেও ধারাবাহিকতা ধরে রাখার চেষ্টা করতে হবে। এভাবে ইনশাআল্লাহ আমরা কোনো একটা বিষয়ে এক্সপার্ট হতে পারি। যেহেতু এই লেখাটি স্পেশালি কম্পিউটার সায়েন্সের স্টুডেন্টদের ফোকাস করে মেইনলি লেখা এই জন্য আমি কিছু রিসোর্স শেয়ার করবো যেন শুরুর দিকে যারা থাকেন বুঝে উঠতে পারেন। কোন রিসোর্স গুলো আপনাদের কাজে লাগবে তাদের জন্য অনেক হেল্পফুল হতে পারে। কম্পিউটার সায়েন্সের কোর কোর্সগুলোর জন্য ভালো টিউটরিয়াল ওয়েবসাইট(Tutorialspoint,W3School,GeeksforGeeks,StackOverflow,Studytonight, Computer Hope,Guru99,JavaTpoint) জনপ্রিয় কিছু ওয়েবসাইট যেখা-ন থেকে আপনি কোর্স করতে পারবেন আপনার পছন্দ মতো বিষয়ে –(Khan Academy, Udemy, Coursera, Linkedin Learning, Codeacademy, SkillShare, Udacity,Edx) সেলফ লার্নিংয়ের জন্য এই রিসোর্স গুলো অসাধারণভাবে আপনার জন্য কাজে লাগাতে পারে। কম্পিউটার সায়েন্সের স্টুডেন্টদের জন্য প্রোগামিং এবং প্রবলেম সলভিংয়ের বিষয়টাকে অনেক গুরুত্বের সাথে দেখা হয় আপনি যদি টেক জায়ান্ট কোম্পানিগুলোতে বা সফটওয়্যার ফিল্ডে ভালো করতে চান সেক্ষেত্রে প্রোগামিং এবং কনটেস্ট প্রোগামিং এ আপনাকে অনেক ভালো করার চেষ্টা করতে হবে। বিশেষ করে ডাটা স্ট্র্যাকচার এবং এলগোরিদমে শুরু থেকেই জোর দেওয়া উচিত। জনপ্রিয় কিছু ওয়েবসাইট আছে যেখান থেকে আপনি প্রোগামিং শিখতে পারবেন এবং বিভিন্ন সমস্যার সলভ করতে পারেন । আসলে আপনি যখন কম্পিঊটার সায়েন্সে পড়বেন কিন্তু প্রগ্রামিং বিষয়ে আপনার নলেজ শূণ্যের কাছাকাছি তখন আপনার অবস্থা অনেকটা এমন যে নিজেকে সার্জিক্যাল ডাক্তার হিসেবে পরিচয় দেয় অথচ সে অপারেশন করতে পারে না। প্রোগামিং রিলেটেড কিছু রিসোর্স গিটহাবের একটা রিসোর্স আমার অনেক প্রিয় যেটা আমি স্টুডেন্টদের সাথে শেয়ার করি বাংলায় প্রোগ্রামিং রিসোর্সসমূহ এছাড়াও অন্যান্য রিসোর্স সমূহ An awesome list for competitive Programming! আর একটা গুরুত্বপূর্ণ ব্লগ https://shahjalalshohag.com/ গুরুত্বপূর্ণ কিছু ওয়েবসাইট যেখান থেকে আপনি কোডিং রিলেটেড বিষয়গুলোতে হেল্প পেতে পারেন- Codeforces, UVA online Judge,CodeChef,Leetcode, Hackerrank,Top Coder,Spoj. আপনি যদি ডাটা সায়েন্স রিলেটেড বিষয়ে কোর্স পেতে চান তাহলে DataCamp,Medium,TowardsDataScience Website গুলো হেল্পফুল হতে পারে। ইনশাআল্লাহ এই প্রসেসে আগালে আমরা ভালো করতে পারবো আমাদের সম্ভাবনাগুলোকে কাজে লাগাতে পারবো, নিজেকে আরও দক্ষ করে তুলতে পারবো। আমার লেখাটিতে ছোট অথবা বড় ধরনের কোন ভুল থাকলে আমাকে অবহিত করলে কৃতজ্ঞ থাকিব।

Writer: Tanim Ahmed,Lecturer(CSE)