বর্তমান সময়ে পৃথিবী ব্যপি বহুল আলোচিত মরণব্যধি করোনা তাইরাসকে প্রতিকিরূপে পেনসিলের ডগায় ঘষা দিয়ে উদ্বেগ ও আবেগের সমন্বয়ে শিল্পীমনে আবেদন তৈরীতে মানুষের সবচেয়ে প্রিয় বস্তু ফুল’ কে করোনা’ রূপে প্রকাশ করেছেন আমার ছাত্র মো: শামীমুর রহমান।

শামীমূরের আঁকা ‘ভাস উইথ টেন করোনা’ শিরোনামে শিল্পকর্মটি আমাকে পোষ্ট ইম্প্রেশনিজমের কথা সরণ করে দেয়। ঝট করে একপলকে একটা বস্তু বা বিষয়কে যখন দেখি তখন কি খুঁটিয়ে দেখি? একপলকে যা দেখলাম তারই ভাল লাগার পরস ছড়িয়ে পড়ে আমাদের হৃদয়ে, এ ভাল লাগা আর অনুভূতিকে প্রাধান্য দিয়ে যে চিত্ররীতির আর্বিভাব হয় তাই ইম্প্রেশনিজম। মোট কথা তাৎক্ষণিক মুহুর্তকে আলো-ছায়ার দোলাচলে মনের অনুভূতিতে ভর করে রঙের যাত্রাই হলো ইম্প্রেশনিজম। ইম্প্রেশন এক ধরনের ভাব, আর ইম্প্রেশনিজম ধারার পরবর্তী ধারাকে পোষ্ট ইম্প্রেশনিজম বলা হয়। ১৮৮০ সালের পরের দিকে শিল্পীরা লক্ষ্য করলেন মনের অনুভূতি আর তাৎক্ষনিক আলো-ছায়াকে প্রাধান্য দিয়ে চিত্র আঁকতে গিয়ে শিল্পের কিছু বিশেষ গুণাবলী ক্ষুণ্ণ হচ্ছে। তারা নতুন ভাবে চিন্তা করতে লাগলেন আরো শ্বাশত ও গুরুত্বপূর্ণ প্রাণবন্ত চিত্র আঁকার জন্য। কিছুদিনের মধ্যেই তাদের চিত্রের গড়ন বদলে যায়, চিত্রের মধ্যে আসে গভীরতা, নিট্রোলভাব। ১৯১০ সালে ইংরেজ সমালোচক রজারফ্লাই এ ধারাকে ‘পোষ্ট ইম্প্রেশনিজম’ নামে আখ্যায়িত করলেন।

“পোষ্ট ইম্প্রেশনিজম’ এর মূল বিষয়বস্তু।

১) রেখার প্রকাশধর্মীতা,

২) প্যার্টান,

৩) রঙকে প্রতীক হিসেবে ব্যবহারের প্রবণতা,

৪) মুহুবর অনুভূতি, দূরীভূত করা এবং

৫) পার্সপেকটিভ এর ব্যবহার শুরু হলো।

*পোষ্ট ইম্প্রেশনিজম ধারার উল্লেখযোগ্য শিল্পীরা হলেন পল সেজান, ভিনসেন্ট ভ্যানগগ, পলগগ্যাঁ ও সুরাত উল্লেখযোগ্য।

‘ভাস উইথ ফিফটিন সানফ্লাওয়ারস ভিনসেন্ট ভ্যান গগ, ১৮৮৮)

এবার আসি ‘ভাস উইথ ফিফটিন সানফ্লাওয়ারস” ভিনসেন্ট ভ্যান গগ, ১৮৮৮। জড়বস্তুর ছবি আঁকায়
এবার আসি ‘ভাস উইথ ফিফটিন সানফ্লাওয়ারস’ ভিনসেন্ট ভ্যান গগ, ১৮৮৮। জড়বস্তুর ছবি আঁকায় ভিনসেন্ট ভ্যান গগের জুড়ি মেলা ভার। জগৎখ্যাত জনপ্রিয় চিত্রকর্মের মধ্যে ‘সানফ্লাওয়ার সিরিজের ছবিগুলো অনেক উপরে থাকবে। দুটি সিরিজে আছে মোট ১২টি ছবি, যেগুলো তিনি এঁকেছিলেন ১৮৮৭ ১৮৮৯ সালের মাঝামাঝিতে। সবই এখন টোকিও, লন্ডন, আমস্টারডাম, মিউনিখ ইত্যাদি বিভিন্ন জাদুঘরে সুচারুভাবে সংরক্ষিত ফুলগুলোতে প্রাকৃতিক সৌন্দর্য আর রঙের ব্যবহার লক্ষণীয়, ভাবাবিষ্ট গগের ছবিটিতে ল লক্ষণীয় রেখা, রঙ, ও অনুপাতের ব্যবহার সবকিছুই খানিকটা নিয়মের বাইরে, এখানে শিল্পীর ব্যক্তিসতন্ত্ররই প্রতিকৃতি এই সূর্যমুখী ফুলগুলো। যেখানে তিনি নিজেকেই বহিঃপ্রকাশ করেছেন অত্যন্ত সাবলীলভাবে; সর্বদা নিজেকে তুলনা করেছেন সূর্যমুখীর সাথে। সোনালি রঙে পূর্ণ ছবিটি হয়তো তাকে ক্ষণিকের জন্য হলেও প্রশান্তি দিয়েছিল। তিনি ছবিটি আঁকতে গিয়ে হয়তো উদ্দীপনা আর গূঢ়ার্থের উপরই বেশি গুরুত্ব দিয়েছেন।

আয়ত্তগতকে অতিক্রম করে জ্ঞানের সীমা সম্প্রসারণ যেহেতু জ্ঞান চর্চার মূলধর্ম, তাই সৌন্দর্য জিজ্ঞাসার চুড়ান্ত সমাধান আশা করা যায় না। বহমান সময়ের পর্বে পর্বে রুচির রূপান্তর ঘটে সংস্কৃতির সাময়িক পরিমন্ডলে ভিন্নমুখী প্রবণতায় পরিজ্ঞাত ও নতুন পরীক্ষার স্তরগত শিল্পক্রিয়ার চারিত্রিক বৈশিষ্ট্যে সংঘর্ষ দেখা দেয়। তখন অনিবার্য হয়ে উঠে নতুন ভাবনা, বিশ্লেষণ পদ্ধতির কথা এবং গঠন করতে হয় নতুন তত্ত্ব, নতুন সংজ্ঞা। গগের খেত্রে ও ব্যতিক্রম হয়নি, গগ সূর্যমুখীর অন্তরালে প্রায়শই নিজেকে আবিষ্কার করার চেষ্টা করতেন। গ্রীষ্মকালটা যেমন ক্ষণস্থায়ী আর সূর্যমুখীও খুব কম সময়ের জন্য আসে। এই ক্ষণকালীন সূর্যমুখীর মতোই তিনিও খুব কম বয়সেই চলে যান পৃথিবী ছেড়ে। কিন্তু আমাদের মনের মধ্যে তিনি সবসময়ের জন্য আসন পেয়ে গেছেন সূর্যমুখীর পটুয়া হিসেবে। ঊনবিংশ শতাব্দীর শুরুতে আসা সোনালি হলুদাভ রঙকে তিনি লুফে নিয়েছিলেন আর সফলও হয়েছেন। গগের মতো উইলিয়াম বে-ক, ক্লদ মনে, অ্যালেন গিন্সবার্গসহ অনেকেই সূর্যমুখীর প্রতি বিশেষ অনুরাগী ছিলেন। ১৯৮৭ সালের মার্চে এক জাপানি বিনিয়োগকারী নিলামে এই সূর্যমুখীর ছবিটি কিনেছিলেন ৪০ মিলিয়ন মার্কিন ডলার দিয়ে। সে সময়ে এটি রেকর্ড ছিল।

“ভ্যান গগ বলতেন, পৃথিবীর প্রতি একটা ঋণ, একটা কর্তব্য আমি বোধ করি, ত্রিশ বছর চলে ফিরে বেড়াচ্ছি পৃথিবীতে এবং কৃতজ্ঞতা স্বরূপ শিল্পকর্ম আকারে কিছু স্মৃতিচিহ্ন রেখে যেতে চাই। আমার এ কাজে শিল্পকলার কোনো বিশ্বাসকে সন্তুষ্ট করা হবে না, কেবলমাত্র বিশ্বস্ত মানবিক অনুভূতির একটা প্রকাশ হবে তবে সমকালে তিনি অবহেলিত হলেও তাঁর বিশ্বাস ছিল এমন সময় আসবে, যখন আমিও বিক্রি হবো।

তুলির জাদুকরতো তারাই যাঁরা রঙের মাধ্যমে জগৎকে রাঙান, বোধকে তুলে ধরেন ক্যানভাসে। চিত্রশিল্পীদের আঁকা ছবিগুলো কখনো তুলে ধরে সময়, আবার কখনো অতিক্রম করে যায় সময়কে। শিল্পী প্রচুর প্রাকৃতিক দৃশ্য, মনুষ্যচিত্র এবং স্টিল লাইফ অঙ্কন করেছেন, এর মধ্যে তাঁর স্টিললাইফগুলো বেশি বিখ্যাত। তিনি রঙ এর চাইতে ফর্মের গুরুত্ব দিতেন বেশি। বস্তুর বাহ্যিক রূপ তার কাছে মুখ্য বিষয় ছিল না, মুখ্য বিষয় ছিল বস্তুর অভ্যন্তরীন বৈশিষ্ট্যকে ফুটিয়ে তোলা।

শিল্পের প্রকৃত অর্থ নির্ণয় খুবই দুরূহ বরং যা প্রতি মুহুর্তে মানুষের চিন্তা ভাবনাকে গোলক ধাঁধাঁয় ফেলে। শিল্পকে মানুষ বিভিন্ন দৃষ্টিকোণ থেকে দেখতে অভ্যন্ত। বিধায় প্রাচীন কাল থেকে আধুনিক কাল

পর্যন্ত শিল্পকে সংজ্ঞায়িত করা হয়েছে। যেমন: “শিল্প হতে পারে ধ্যান যারা ক্লাসিক পন্থী তারা বলেন “শিল্প হল অনুকরণ” কিন্তু রোমান্টিকরা মনে করেন শিল্প নির্মাণ নয় সৃষ্টি।”

লেখক: ড. মো: সামাউন হাসান
সহকারী অধ্যাপক
মাশিশমশডয়া এন্ড ক্রিনয়টিভ মিকনোলক্রজ শডপািটনমন্ট