খাদ্য ও পুষ্টি বিজ্ঞান, বিজ্ঞানের একটি অতি আধুনিক ও নব্য শাখা। তুলনামূলকভাবে নবীন হলেও, খাদ্য ও পুষ্টি বিজ্ঞানের গবেষণা থেকে প্রাপ্ত তথ্যাদি, খাদ্যতালিকা ও খাদ্যভ্যাস-এর নির্দেশিকাগুলি আমাদের সু-স্বাস্থ্য নিশ্চিত করতে বিশেষ ভূমিকা পালন করছে। সুষম পুষ্টি অনেক রোগ প্রতিরোধের অন্যতম মাধ্যম। টেকশই জনস্বাস্থ্য নিশ্চিত করণের লক্ষে খাদ্য ও পুষ্টি বিষয়ক গবেষণা, প্রকল্প, অধ্যায়ন ইত্যাদির বিকল্প নেই। বর্তমান ও আগামীর টেকসই জনস্বাস্থ্যে খাদ্য ও পুষ্টি বিজ্ঞান অধ্যায়ন, এই বিষয়ে বিস্তর গবেষণা ও গুণসম্পন্ন স্নাতক তৈরীর গুরুত্ব। উপলব্ধি করে বাংলাদেশের অন্যতম সেরা প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয়, ড্যাফোডিল ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি ২০০৯ সালে এলাইড হেলথ সাইন্সেস (Allied Health Sciences) অনুষদের অধীনে নিউট্রিশন অ্যান্ড ফুড ইঞ্জিনিয়ারিং (এন.এফ.ই)-বিভাগের যাত্রা শুরু করে। তবে ড্যাফোডিল ইন্টার্ন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি-এর পাশাপাশি দেশের বেশিরভাগ বিশ্ববিদ্যালয় ও সকল স্তরের শিক্ষা কাঠামোতে খাদ্য ও পুষ্টি সম্পর্তিক বিষয়গুলোর অন্তর্ভুক্তি খুবই গুরুত্বপূর্ণ। খাদ্য ও পুষ্টি বিভাগের যত বেশি স্নাতক তৈরী হবে, আমাদের বিশ্ব তত টেকশই জনস্বাস্থ্য নিশ্চিত করতে সক্ষম হবে।

খাদ্য, পুষ্টি এবং স্বাস্থ্যের মধ্যে সম্পর্ক জৈবিক, পরিবেশগত, আর্থ-সামাজিক, সাংস্কৃতিক এবং আচরণগত কারণগুলির দ্বারা বিভিন্নভাবে প্রভাবিত হয়। যেহেতু পৃষ্টির প্রয়োজনীয়তা বয়স, লিঙ্গ, ওজন, জেনোটাইপ, পেশা, শরীরবৃত্তীয় এবং রোগের অবস্থার সাথে পরিবর্তিত হতে পারে, তাই পুষ্টি একজন ব্যক্তির জন্ম থেকে আমৃত্যু ইতিবাচক বা নেতিবাচকভাবে প্রভাব ফেলতে সক্ষম।

পুষ্টি নিয়ে বিস্তৃত গবেষণা, গবেষণা থেকে প্রাপ্ত তথ্যাদি, খাদ্যতালিকা ও খাদ্যভ্যাস-এর নির্দেশিকাগুলি আমাদের সু-স্বাস্থ্য নিশ্চিত করতে বিশেষ ভূমিকা পালন করছে। সুষম পুষ্টি অনেক রোগ প্রতিরোধের অন্যতম মাধ্যম। স্থূলতা, হৃদরোগ, ডায়াবেটিস এবং ক্যান্সারের মতো অসংক্রামক রোগের কারণ হিসবে খাদ্যভ্যাস অন্যতম ভূমিকা হিসেবে দেখা যাচ্ছে।

উন্নয়নশীল দেশগুলোতে প্রতিনিয়ত নগরায়ন বাড়ছে, পাশাপাশি জনগনের আয়-রোজগারে আসছে আমূল পরিবর্তন। যার ফলে মানুষের খাদ্যাভ্যাস ক্রমশই পরিবর্তিত হচ্ছে; মাংস এবং দুগ্ধজাত খাবারের দিকে মানুষের ঝোঁক বাড়ছে। আবার উন্নয়নশীলদেশগুলোতে একই সাথে ধনী ও গরীবের অসম ব্যবধান বেড়ে চলেছে। ফলশ্রুতিতে বিশ্ব জনসংখ্যার একটি বড় অংশ পুষ্টিকর ও স্বাস্থ্য সম্মত খাবারের চাহিদা মেটাতে পারছে না। বর্তমানে, বিশ্বের জনসংখ্যার প্রায় ৫০% অতিরিক্ত খাদ্য গ্রহণ, ক্ষুধা এবং মাইক্রোনিউট্রিয়েন্ট ডেফিসিয়েন্সিতে ভুগছে। এই বিপুল জনসংখ্যার পুষ্টিগতভাবে সুষম খাদ্য ও খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে না পারলে টেকসই পুষ্টিসমৃদ্ধ ও স্বাস্থ্যসম্মত সমাজ প্রতিষ্ঠা করা সম্ভব নয়। প্রযুক্তিতে বিনিয়োগ, অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি এবং সরকারী নীতির বাস্তবায়ন সামগ্রিকভাবে খাদ্য শৃঙ্খলকে পরিবর্তন করতে পারে যা বহুজাতিক কৃষি-ব্যবসা এবং খাদ্য প্রস্তুতকারকদের খাদ্য উৎপাদন ও খাদ্য গ্রহণ পদ্ধতির পরিবর্তনকে ধারাবাহিকভাবে প্রভাবিত করতে পারে। একই সাথে মানব স্বাস্থ্য, স্বাস্থ্যসেবা খরচ এবং প্রাকৃতিক সম্পদের পাশাপাশি পশু কল্যাণের উপর ইতিবাচক প্রভাব ফেলতে পারে। পুষ্টিকর টেকসই কৃষি ব্যবস্থাপনা খাদ্য উৎপাদন, খাদ্য নিরাপত্তা, সুষম পুষ্টি জনস্বাস্থ্য, ইত্যাদি নিশ্চিত করণে খাদ্য ও পুষ্টি বিজ্ঞানের উন্নয়নের কোন বিকল্প নেই ।

খাদ্য ও পুষ্টি বিজ্ঞান একটি অত্যন্ত জটিল বিষয় হলেও, বর্তমানে পুষ্টি বিজ্ঞানের অগ্রগতি অতি- উল্লেখযোগ্য। এত উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি সত্ত্বেও পুষ্টি বিজ্ঞানকে এখনো বিজ্ঞানের নব্য শাখা হিসাবে বিবেচনা করতে হবে। খাদ্য থেকে প্রথমে ভিটামিনকে পৃথক করা হয়েছিল এক শতাব্দীরও কম আগে। পুষ্টি বিজ্ঞান আশ্চর্যজনকভাবে নবীন; বিগত ৫০ বছর ধরে খাদ্য-পুষ্টির ঘাটতির উপর গবেষণা পরিচালনা করা হচ্ছে, সাম্প্রতিক গবেষণার ফলে জটিল অসংক্রামক রোগে পুষ্টি যে ভূমিকা পালন করে তা জানা গেছে। পুষ্টি বিজ্ঞানকে প্রাসঙ্গিক এবং বিকশিত করার জন্য, এটিকে অবশ্যই জাতিসংঘের টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যগুলির (Sustainable Development Goal-SDG) সাথে সামঞ্জস্য রেখে এবং COVID-19 পরবর্তী যুগে বিশ্বের বৃহত্তম জনস্বাস্থ্য চ্যালেঞ্জ বিশদভাবে বিবেচনা করতে হবে। আর এজন্য পুষ্টি বিজ্ঞানে অধ্যানের কোন বিকল্প নেই।

খাদ্য ও পুষ্টি বিজ্ঞানের স্নাতকরা তাদের শিক্ষাকে কাজে লাগিয়ে এ সময়ের অনেক ঝুকিপুর্ণ রোগ যেমন, হৃদরোগ, ডায়বেটিস, ক্যান্সার ইত্যাদি রোগের ঝুঁকি কমাতে এবং বিশ্বব্যাপী জনস্বাস্থ্য ও অর্থনীতিকে ইতিবাচকভাবে প্রভাবিত করার সমাধান খুঁজে বের করার জন্য প্রতিনিয়ত কাজ করে যাচ্ছে। জনস্বাস্থ্য উন্নয়নের কাঙ্ক্ষিত লক্ষমাত্রা অর্জন এবং জনগণের আস্থা সংহত করতে আরো অধিক সংখ্যক খাদ্য ও পুষ্টি বিষক গবেষক ও কর্মী প্রয়োজন হবে।

বর্তমান ও আগামীর টেকসই জনস্বাস্থ্যে খাদ্য ও পুষ্টি বিজ্ঞান অধ্যায়ন, এই বিষয়ে বিস্তর গবেষণা ও গুণসম্পন্ন স্নাতক তৈরীর গুরুত্ব উপলব্ধি করে বাংলাদেশের অন্যতম সেরা প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয়, ড্যাফোডিল ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি ২০০৯ সালে এলাইড হেলথ সাইন্সেস (Allied Health Sciences) অনুষদের অধীনে নিউট্রিশন অ্যান্ড ফুড ইঞ্জিনিয়ারিং (এন.এফ.ই)-বিভাগের যাত্রা শুরু করে। এন.এফ.ই বিভাগের যাত্রার শুরু থেকে এখন পর্যন্ত এই বিভাগ, সুষম ও পুষ্টিকর খাদ্য প্রক্রিয়াজাতকরণ, নতুন নতুন খাদ্যদ্রব্য উদ্ভাবন, পুষ্টি বিষয়ক সচেতনতা বৃদ্ধি, খাদ্য ব্যবসায় অগ্রগতি, খাদ্য ও পুষ্টি বিষয়ক উন্নত গবেষণা সহ ডেভেলপমেন্ট সেক্টরের বিভিন্ন খাতে অবদান রেখে চলেছে। এই বিভাগের স্নাতকরা যেমন দেশের বড় বড় খাদ্য উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠান গুলোতে নিষ্ঠার সাথে কাজ করে যাচ্ছে, তেমনি বিভিন্ন হসপিটালে নিউট্রিশন ও ডায়েট বিষয়ক পরামর্শক হিসেবেও কাজ করছে। দেশের বড় বড় ন্যাশনাল ও ইন্টান্যাশনাল এনজিও গুলোতেও এ বিভাগের স্নাতকরা কাজ করে যাচ্ছে। এছাড়াও দেশে ও দেশের বাহিরে অনেকেও উন্নত গবেষণার সাথে যুক্ত হয়ে খাদ্য ও পুষ্টি খাতকে আরো অগ্রসর করছে। এন.এফ.ই-এর স্নাতকরা বর্তমান ও আগামীর জন্য টেকসই জনস্বাস্থ্য নিশ্চিত করতে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। তবে ড্যাফোডিল ইন্টান্যাশনাল ইউনিভার্সিটি-এর পাশাপাশি দেশের বেশিরভাগ বিশ্ববিদ্যালয় ও সকল স্তরের শিক্ষা কাঠামোতে খাদ্য ও পুষ্টি সম্পর্কিক বিষয়গুলোর অন্তর্ভুক্তি খুবই গুরুত্বপুর্ণ। খাদ্য ও পুষ্টি বিভাগের যত বেশি স্নাতক তৈরী হবে, আমাদের বিশ্ব তত টেকশই জনস্বাস্থ্য নিশ্চিত করতে সক্ষম হবে। পুষ্টি বিজ্ঞান এ যাবতকালে যে অগ্রগতি বয়ে এনেছে তা চালিয়ে যেতে আরো অধিক গবেষণার প্রয়োজন হবে, প্রয়োজন হবে ভিন্নমাত্রার চিন্তাভাবনা এবং কর্মের। তাই পুষ্টি বিজ্ঞানকে কীভাবে আরো এগিয়ে নেয়া যায় সে ব্যাপারে আরো অধিক নজর দেয়া প্রয়োজন।

লেখকের সংক্ষিপ্ত পরিচিতি: মো. নাওয়াল সরোয়ার ড্যাফোডিল ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটির ডিপার্টমেন্ট অব পাবলিক হেলথ থেকে স্নাতকোত্তর ও ডিপার্টমেন্ট অব নিউট্রিশন অ্যান্ড ফুড ইঞ্জিনিয়ারিং থেকে স্নাতোক সম্পন্ন করে বর্তমানে একই ডিপার্টমেন্ট-এ শিক্ষকতা করছেন। শিক্ষকতা পেশায় আসার আগে নাওয়াল সরোয়ার, হিউম্যান ডেভেলপমেন্ট রিসার্চ সেন্টার নামক গবেষণা প্রতিষ্ঠানে গবেষণা সহকারী হিসেবে প্রায় সাড়ে তিন বছর কর্মরত ছিলেন। নাওয়াল সরোয়ার শিক্ষকতার পাশাপাশি খাদ্য, পুষ্টি ও জনস্বাস্থ্য সম্পর্কিত বিভিন্ন গবেষণার কাজে যুক্ত আছেন।